• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

`পাটনি` সম্প্রদায়ের মানুষও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ঘর দিয়ে যে উপকার করলেন, তা জীবনেও ভোলার নয়। তার জন্য প্রার্থনা করি, যেন দেশে সব সময় তার সরকারই থাকে। সারাজীবন এভাবেই যেন মানুষের সেবা করে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।

কথাগুলো রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ঘনিরামপুর বড়গোলা গ্রামের পাটনিপাড়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বিনোদ বিহারী দাসের। তার মতো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাটনি সম্প্রদায়ের ২৫টি পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে সেমিপাকা ঘর পেয়েছে। যারা মূলত বাঁশ দিয়ে ডালা, কুলা, ঢালি, চালনিসহ নানা গৃহস্থালি জিনিস ও তৈজসপত্র তৈরি এবং বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। ঘর পাওয়া এসব পরিবারে এখন দারুণ উচ্ছ্বাস-আনন্দ বয়ে যাচ্ছে।

ঘনিরামপুর বড়গোলা গ্রামটি পড়েছে কুর্শা ইউনিয়নে। এই গ্রামে যমুনাশ্বরী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে পাটনিপাড়া, যেখানে ৩২টি পরিবারের বাস। এর মধ্যে ছয়টি পরিবারের অবস্থা ভালো হওয়ায় আগে থেকেই সেমিপাকা ঘর ছিল তাদের। একটি পরিবার আগেই সরকারের বিশেষ সহায়তায় দুর্যোগ সহনীয় ঘর পেয়েছিল। বাকি ২৫টি পরিবারের জমি থাকলেও ভালোভাবে থাকার মতো ঘর ছিল না। জীর্ণশীর্ণ ঘরে বাস করা পরিবারগুলো নানা দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছিল। ছনের চাল লাগানো মাটির দেয়ালের অথবা বাঁশ-চাটাইয়ের বেড়ার ঘরে মানবেতরভাবে বাস করছিল তারা, যে ঘরগুলো আবার অনেকটাই ভাঙাচোরা হয়ে পড়েছিল। সামান্য বৃষ্টিতে ঘর-বাড়িতে পানি জমে যেত। শীতের রাতে বাঁশের ঘরের ভাঙা বেড়ার ফাঁক দিয়ে কনকনে ঠান্ডা বাতাস ঢুকে জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছিল। প্রতিদিনের সামান্য আয় দিয়ে জীবন চালানো মানুষগুলোর পক্ষে নতুন ঘর বানানোও ছিল অনেকটাই স্বপ্নের মতো। দুস্থ ও অসহায় এই ২৫টি পরিবারের মানুষগুলোর ঘরের স্বপ্ন পূরণ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্বাহী সেলের তত্ত্বাবধানে 'সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন' কার্যক্রমের আওতায় এই পরিবারগুলোকে সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পরিবার পেয়েছে দোচালা টিনের ঘর, যার মেঝে পুরোটাই পাকা। প্রতিটি ঘর তৈরিতে সরকারের ব্যয় হয়েছে এক লাখ টাকা। বসতঘরগুলো উপহার হিসেবে উপকারভোগীদের হাতে তুলেও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

শুধু বসতঘরই নয়, পাটনিপাড়ার বাসিন্দাদের বিদ্যুৎ সুবিধাও নিশ্চিত করা হয়েছে পুরোপুরি। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে পাঁচটি পাকা শৌচাগারও। এ ছাড়া পাটনি সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের জন্য উপবৃত্তি চালুসহ নানা পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।

সরেজমিন পাটনিপাড়া ঘুরে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে পাটনি সম্প্রদায়ের মানুষ এখন উচ্ছ্বসিত। নতুন দিনের স্বপ্নে বিভোর তারা। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করে তোলার নতুন সংগ্রামে নেমেছে এই পাটনি পরিবারগুলো।

নতুন ঘর পাওয়া পাটনিপাড়ার বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব সাবিত্রী রানী দাস উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, স্বামী বিনু রাম দাসের মৃত্যুর পর থেকে অনেক দুঃখকষ্টে জীবন কেটেছে তার। বাঁশের তৈরি জিনিস বিক্রির সামান্য আয় দিয়ে দুই ছেলেকে বড় করেছেন তিনি। তবে এতকিছু করেও সংসারের অভাব কাটেনি, কষ্টেই দিন কাটছিল। এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহার বসতঘর এবং অন্যান্য সুবিধা পেয়ে জীবন বদলানোর নতুন আশা দেখছেন তারা।

একই পাড়ায় সেমিপাকা ঘর পেয়েছেন পঞ্চাশ বছর বয়সী শিবু রাম দাস। যেখানে বয়োবৃদ্ধ মা রাধা রানী দাস এবং স্ত্রী মমতা রানী দাসকে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। মমতা রানী দাস বলেন, নতুন ঘর পেয়ে তারা খুশি। কিন্তু যে স্বল্প আয়, তাতে জীবনধারণে অনেক কষ্ট করতে হয় তাদের। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের তৈরি পণ্য বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করা হলে তারা শ্রমের প্রকৃত মূল্য পাবেন। সে সঙ্গে আরও ভালোভাবে বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পাবেন।

বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, আসলে পাটনি সম্প্রদায়ের কাজ অনেক কষ্টের। বাঁশ দিয়ে নিপুণ হাতে জিনিস তৈরি করতে হয়, সেগুলো বাজারে বিক্রি করেই জীবন-জীবিকা চালাতে হয়। আবার সবসময় হাতে কাজও থাকে না। ফলে অভাব ঘোচে না কখনোই। এ কারণে তাদের তৈরি বাঁশের পণ্যগুলো যেন সারাবছর কোথাও না কোথাও বিক্রি করা যায়, সে জন্য সরকারের সহযোগিতা চান তারা।

সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়নে আগে থেকে চলমান এই কার্যক্রম চলতি মুজিববর্ষে এসে আরও গতি পেয়েছে। মুজিববর্ষে শুধু সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জন্যই সারাদেশে তৈরি করা হচ্ছে তিন হাজার ৫০০ সেমিপাকা ঘর। যার অনেকগুলো তৈরির পর উপকারভোগীদের মধ্যে বিতরণ হয়েছে, বাকিগুলোর নির্মাণকাজও এগিয়ে চলছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্বাহী সেলের মহাপরিচালক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা ছাড়া দেশের ৬১ জেলায় বসবাসরত সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জন্য মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ঘর করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে সাড়ে তিন হাজার নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকেই নতুন ঘরে উঠে পড়েছেন। বাকিরা মুজিববর্ষের মধ্যেই নতুন ঘরে উঠবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিফ আহসান বলেন, মুজিববর্ষে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না- প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নের কাজ যেমন চলছে, তেমনি সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন উন্নয়নের লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় এই কাজ অব্যাহত রয়েছে।

তারাগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষগুলো বসতঘর পাওয়ায় তাদের জীবনমান এখন আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো। প্রধানমন্ত্রীর এমন উপহার পেয়ে তারা যেমন খুশি, তেমনি আমরাও মহৎ এই উদ্যোগটির সফল বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পেরে অনেক গৌরব অনুভব করছি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here