• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

জটিল ভাইরাস গবেষণায় সক্ষম বাংলাদেশ: অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা 

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর প্রায় ১৭ হাজারের বেশি জিনোম সিকোয়েন্স (জিন রহস্য) উন্মোচন করা হয়েছে। এখনো অনেকেই জিনোম সিকোয়েন্সের চেষ্টায় আছে। তবে এই চেষ্টায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। দেশে প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ এর জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহার নেতৃত্বে একদল গবেষক এই গবেষণার কাজটি সম্পন্ন করেন।


এই গবেষণায় তার সঙ্গী ছিলেন রলি মালাকার, সাইফুল ইসলাম সজীব, হাসানুজ্জামান, হাফিজুর রহমান, শাহিদুল ইসলাম, জাবেদ বিন আহমেদ এবং মাকসুদা ইসলাম। দেশে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতার মাঝেও মঙ্গলবার ছড়িয়ে পড়া এই সুখবর জনগণের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ভাইরাসটির গতি-প্রকৃতি, পরিবর্তনের ধরন ইত্যাদি জানতে পারবেন গবেষকরা। সেই সঙ্গে জানা যাবে- আমাদের জন্য কার্যকরী হবে কোন ওষুধ। এই সফলতার খবর এবং ভবিষ্যতে নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন সিএইচআরএফের নির্বাহী পরিচালক ড. সমীর কুমার সাহা। যিনি অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহার পিতাও বটে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সেবিকা দেবনাথ-

করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করার কাজটি কবে থেকে শুরু করেছিলেন?
এ ধরনের ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং বেশ জটিল। বেশিরভাগ সময় বিদেশে নমুনা পাঠিয়ে তাদের মাধ্যমেই জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়। এই কাজে অনেক সময় আমরাও যুক্ত হই। আবার অনেক সময় হই না। আমাদের সিএইচআরএফের যে গবেষক দল তারা বয়সে তরুণ ও খুব উদ্যোমী। তারাই এই কঠিন কাজটি করার উদ্যোগ নিয়েছে। এপ্রিলের শেষের দিকে তারা নমুনা নিয়ে কাজটা শুরু করে। নিয়ম অনুযায়ী, ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করার পর তার তথ্য-উপাত্ত গ্লোবাল জিনোম ডাটাবেজ, জিআইএসএআইডিতে জমা দেয়া হয়েছে এবং এর তথ্য উপাত্ত সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। আমি বলব এই তরুণরা উদ্যোগ নিয়েছিল বলেই আজকের এই সফলতা।

গবেষণার এই কাজে কাদের সহযোগিতা পেয়েছেন?
আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কাজ করি। এই গবেষণা কাজে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইইডিসিআর, বিল এন্ড মেলিন্ড ফাউন্ডেশন, চ্যান-জাকারবার্গ বায়োহাব ইনিশিয়েটিভের সর্বিক সহযোগিতা পেয়েছি।

করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল নিয়ে একটি বিতর্ক আছে। কোন দেশের ভাইরাসের সঙ্গে কোন দেশের ভাইরাসের মিল পেয়েছেন?
প্রতিটা ভাইরাস একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরপর তার জিন বদলায় (মিউটেশন)। করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও তেমনটি পেয়েছি। আমরা পরশু দিনই এটি আপলোড করেছি। এখনো বিস্তারিত বিশ্লেষণে যেতে পারিনি। তবে যতটুকু দেখেছি তাতে বোঝা গেছে, আমাদের দেশে আসার পর এই ভাইরাসটির ৯ বার মিউটেশন হয়েছে। বিশ্বের কয়েকটি দেশেও এই ধরনের চরিত্রের ভাইরাস পাওয়া গেছে। যেমন; সুইডেন, তাইওয়ান, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়া ও সৌদি আরব। এর কারণ হচ্ছে আমাদের দেশে বিভিন্ন দেশ থেকে লোক এসেছে। তাই ওই সব দেশের ভাইরাসের ধরনের সঙ্গে আমাদের দেশের ভাইরাসের ধরনের মিল পাওয়া যাচ্ছে।
করোনা নিয়ন্ত্রণে এই জিনোম সিকোয়েন্স আমাদের কীভাবে সহযোগিতা করবে?
এর ফলে বাংলাদেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ, বিস্তার, আচরণ ও পরিবর্তনের ধরনগুলো জানা যাবে। আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য তা কতটা ভীতিকর ও দুর্বল তাও বোঝা যাবে। একই সঙ্গে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ফলে ভবিষ্যতে এই ভাইরাস প্রতিরোধে যে ধরনের ভ্যাকসিন আসবে সেগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটা কার্যকরী হবে তাও সহজে নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।

কতগুলো সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করলে পরিস্থিতি বোঝা সম্ভব?
চলতি সপ্তাহে একটি এবং আগামী সপ্তাহে আরো একটি জিনোম সিকোয়েন্স করার কাজ শেষ হবে। আশা করছি আগামী দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে আমরা ৬০ থেকে একশটি সিকোয়েন্স করব। তখন আরো অনেক বেশি জানাতে পারব এবং প্রকৃত পরিস্থিতি জানতে পারব।

এই সফলতায় অনুভূতি কী?
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের কয়েকটি দেশ, চীন এবং ভারতেও ওইসব দেশের প্রেক্ষাপটে করোনা ভাইরাসের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন সেসব দেশের গবেষকরা। করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স বাংলাদেশেও উন্মোচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো এ ধরনের গবেষণার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশে বসে এ ধরনের গবেষণা করতে পারে। এটাই আমাদের প্রাপ্তি এবং অহঙ্কারের জায়গা।

Place your advertisement here
Place your advertisement here