• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য পত্রিকা দেশ’র প্রচ্ছদে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু 

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ জানুয়ারি ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য পত্রিকা ‘দেশ’-এ প্রচ্ছদ নিবন্ধে উঠে এলো বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু। দেশ পত্রিকার ২ জানুয়ারি ২০২২ সংখ্যার সম্পাদকীয়তে ভারত এবং ইন্দিরা গান্ধীর স্মৃতিচারণার মাধ্যমে তুলে আনা হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষকে। 

‘ইতিহাস চেতনা মুছে ফেলার অপচেষ্টা’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ১৯৭১ সালে। ২০২১ যে কারণে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ। বাংলাদেশের স্বাধীনতাপ্রাপ্তিরও পঞ্চাশতম বর্ষ। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের তো নিশ্চিত, ভারতবর্ষের ক্ষেত্রেও এই উদযাপন মুহূর্ত নানাভাবে স্মরণীয়। একাত্তরের যুদ্ধের অব্যবহিত আগে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ইয়াহিয়া খানের সেনার বীভৎস অত্যাচার বর্বরতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিলো। পূর্ববঙ্গের এই ঘোর দুর্দিনে ভারতের তৎকালীন সরকার নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকতে পারেননি। নয়াদিল্লির অকুণ্ঠ সহযোগিতা এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টা-স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের ক্ষেত্রে এর অস্বীকার কার্যত অসম্ভব। আর সেই সরকারের প্রধান রূপে ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা তো কখনই বিস্মৃত হওয়া যায় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের মতো অটল ব্যক্তিত্ব, সেই সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর অপরাজেয় মনোভাব, এই দুয়ের মিলিত ইচ্ছাশক্তি সেদিন পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীকে পর্যুদস্ত করায় শক্তি জুগিয়েছিল। মুজিবুরকে দাবায়ে রাখা যায়নি।’ 

স্বাভাবিকভাবের দেশ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইতিহাসের স্মরণবেলা পশ্চিমবাংলায় অবস্থান করা বাংলাদেশি শেকড়ের মানুষের মন ছুঁয়ে গেছে। দেশ পত্রিকার এবারের সংখ্যায় শুধু সম্পাদকীয়ই নয়, প্রচ্ছদ কাহিনি-১-এ ‘বাংলাদেশ, ইন্দিরা এবং ইতিহাসের সত্য’ শীর্ষক রচনায় লেখক সুমিত মিত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভে ভারতের তথা ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকার নানা কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা ঐতিহাসিক স্মৃতিকে তুলে ধরা হয় লেখনীর মাধ্যমে। 

কাহিনিতে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের হাতে তাঁর বন্দিদশার অবসানে লন্ডন হয়ে দেশে ফেরার পথে ছুঁয়ে গেলেন দিল্লি। সেখানে বললেন, এই ঐতিহাসিক শহর হয়ে দেশে ফিরছি, কারণ, আমার এক বিশেষ অর্ঘ্য নিবেদন করার ছিলো ভারতের মানুষকে এবং শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর মতো মহীয়সী প্রধানমন্ত্রীকে।’ 

প্রচ্ছদ কাহিনি-২-তেও উঠে এসেছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু। ‘সচেতন অবহেলা’ শীর্ষক কাহিনিতে দেবাশিস ভট্টাচার্য্যরে লেখনীতে দেশভাগ ও বাংলাদেশের জন্ম এবং অবশ্যই মুজিব-ইন্দিরার স্মৃতি রোমান্থন করা হয়েছে। প্রচ্ছদ কাহিনি-৩-এ ‘বাংলা একটি দেশের নাম’ শীর্ষক নিবন্ধে অগ্নি রায় বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে আলোকপাত করেছেন। কাহিনির প্রথম ছবিতেই ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর শপথগ্রহণের দুর্লভ ছবি প্রকাশিত হয়েছে। 

কাহিনিতে ভারতকে বাংলাদেশের মিত্রশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। সন্ধ্যার মুখে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সব আলো জ্বেলে দেওয়া হয়েছে। পথে পথে আনন্দে আত্মহারা মানুষ। গাড়ি থামিয়ে জড়িয়ে ধরছেন মিত্রবাহিনীর সেনাদের। একটু অন্ধকার হতেই হেড লাইট জ্বালিয়ে ঢাকা শহরে তখন ঢুকছে একের পর এক মিত্রবাহিনীর কনভয়।’ 

এই কাহিনিতে শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ মৈত্রী চুক্তি দুদেশের মধ্যে গোড়াপত্তনের শুরু বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ‘১৯৭৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় বাণিজ্য চুক্তি ও ’৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে তো বটেই, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে ফের অন্ধকার নেমে আসে। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবার আস্থা ও প্রত্যাশার আবহ তৈরি হয়। ঐতিহাসিক গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আবার মাঝে ৯ বছরের ছন্দপতন। ২০০৯ সালে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আবার নাগরদোলায় উপরে উঠে আসে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক। ’৬৮ বছরের প্রাচীন ছিটমহল সমস্যার সমাধানে ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তি, সমুদ্রের সীমা চিহ্নিতকরণসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলো একে একে সমাধান হতে শুরু করে। ব্যবসা-বাণিজ্য তথা দ্বিপাক্ষিক অর্থনীতিকে গতিশীল করতে দুদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেভাবে এগিয়েছে তা এককথায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন।’ 

এবারের দেশ পত্রিকার প্রচ্ছদ ছবিতে ইন্দিরা এবং মুজিবের যৌথ ছবি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে স্বাভাবিকভাবেই উসকে দিয়েছে। প্রচ্ছদ ছবির নিচেই লেখা, ‘ঐতিহাসিক অনৈতিহাসিক’। পাশাপাশি লেখা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে স্বয়ং ইন্দিরা গান্ধীকে উপেক্ষা করল মোদি সরকার। ছোট্ট এই দুই কথার লেখনীর মাধ্যমে ভারতের বর্তমান মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তির্ষক মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলেও আলোচনা-সমালোচনার ঢেউ তুলে দিল। তবে তার থেকেও বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু শীর্ষক প্রচ্ছদ কাহিনি এবারের দেশ পত্রিকাকে ওপার বাংলা ছেড়ে চলে আসা পশ্চিমবাংলার ছিন্নমূল মানুষদের কাছে একখণ্ড ইতিহাসের টুকরো হয়েই যেন ধরা দিল।

Place your advertisement here
Place your advertisement here