• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

কমেছে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি, বেড়েছে কাজের গতি

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের দশ বছরে বদলে গেছে সরকারি-বেসরকারি, সামরিক-বেসামরিক পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনমান। এ সময়ের মধ্যে সব পেশাজীবীর বেতন-ভাতা বেড়েছে কয়েক গুণ। সরকারের দুই মেয়াদে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সহ সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে দুবার, একবার দেওয়া হয়েছে মহার্ঘ্য ভাতাও।

সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিরাপদ ও নিশ্চিত আবাসনের কথা চিন্তা করেই সরকার ভর্তুকি দিয়ে বেতন গ্রেড ভেদে বিভিন্ন পরিমাণ গৃহ নির্মাণ ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সর্বনিম্ন ২০ লক্ষ এবং সর্বোচ্চ ৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জনপ্রতি এই ঋণ দেওয়া হবে। একইসাথে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন বাড়ানো হবে।

ইতোমধ্যেই বর্ধিত বেতন সমন্বয় করতে বাজেটে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার ৩০২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাতে মোট ৫৮ হাজার ৫১২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ খাতে গত অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৫৩ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া গৃহ নির্মাণ ঋণ বাস্তবায়নে সুদ পরিশোধ (ভর্তুকি) খাতে ১৯শ’ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রেখেছে সরকার। প্রস্তাবিত গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী সুদ হার হবে ১০ শতাংশ।

এর মধ্যে ঋণ গ্রহীতার পাঁচ শতাংশ সুদ পরিশোধ করবে সরকার। এই সুদ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে। অবশিষ্ট পাঁচ শতাংশ সুদ ঋণ গ্রহীতাকে পরিশোধ করতে হবে।

প্রথমে সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম-সচিবরা গাড়ি কেনার জন্য ঋণ সুবিধা পেলেও চলতি বছরই এ সুযোগ পেয়েছেন উপ-সচিবরা। শুধু প্রশাসনেই নয়, পুলিশের ক্ষেত্রেও এ সুযোগ-সুবিধার কমতি নেই। পদোন্নতি, আবাসন, যানবাহন, পোশাক, রেশনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন পুলিশের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা। রেশন পেয়েছেন শতভাগ।

অতীতে কখনই পুলিশের এমন সুযোগ-সুবিধা ছিল না। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, কর্তব্যরত অবস্থায় কোনো পুলিশ সদস্য নিহত হলে অনুদান ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ এবং আহত হলে ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষিত  ইন্সপেক্টর পদকে দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার এবং এসআই ও সার্জেন্ট পদকে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে।

পুলিশ,ৱ্যাব থেকে শুরু করে সবার ঝুঁকি ভাতা বেড়েছে। পুলিশে রেশনের বৈষম্য নিরসন সহ সর্বশেষ ৩০ ভাগ ঝুঁকিভাতা ঘোষণা করায় নতুনভাবে উজ্জীবিত পুলিশ বাহিনী। সামরিক বাহিনীর জেসিওদের মাসিক ২০ শতাংশ মাসিক বাড়ি ভাড়া ভাতা পুনঃস্থাপন করেছে সরকার।

পুলিশ বাহিনীর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিজিবি, আনসার, ভিডিপি এবং গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বেতন। দেশ রক্ষার অতন্দ্র এই প্রহরীদের সম্মান এবং কাজের মূল্যায়ন ও অনুপ্রেরণা বৃদ্ধি করতেই সরকারের এত উদ্যোগ।

শুধু সরকারি পেশাজীবীরা নয়, অবসরপ্রাপ্ত প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী (এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের) ‘অবসর’ ও ‘কল্যাণ’ ভাতা পাচ্ছেন। ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত অবসর নেওয়া আবেদনকারীরা এ সুবিধার আওতাভুক্ত। প্রসঙ্গত, মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণে দুটি আর্থিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।

তা হল ‘শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট’ এবং ‘শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড’। আর্থিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে অবসরপ্রাপ্তদের সুবিধা দিতে পারছিল না ‘শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড ও ‘শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট’। এ কারণে সুবিধাভোগীরা মানবেতর জীবনযাপন করছিল ।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো পত্রে বলা হয়, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের কাছে দেয়া আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে। এক্ষেত্রে কল্যাণ ট্রাস্টের আবেদন নতুন বেতন স্কেলে এবং অবসর সুবিধা বোর্ডের জন্য আপাতত পুরনো বেতন স্কেলে নিষ্পত্তি করতে হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, আবেদনগুলো নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজন ৭৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ২৫৭ কোটি টাকা সমন্বয় করা হবে শিক্ষা বিভাগের বাজেট থেকে।

এ বরাদ্দ থেকে কল্যাণ ট্রাস্টকে ২২৫ কোটি টাকা এবং অবসর সুবিধা বোর্ডকে ৫৩২ কোটি টাকা দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি বেসরকারি ও রেজিস্টার্ড ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে। ওই মেয়াদেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দেওয়া হয়। এর আগে তাদের পদমর্যাদা ছিল তৃতীয় শ্রেণির।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময়েই ২০১২ সালের জুন মাসে সাংবাদিক কর্মচারীদের জন্য গঠন করা হয় অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড। এই বোর্ড ২০১৩ সালে সাংবাদিক-কর্মচারীদের নতুন ওয়েজ বোর্ড সংক্রান্ত প্রতিবেদন তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেয়। পরবর্তীতে সরকার সেপ্টেম্বর মাসে অষ্টম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করে। নতুন ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পায় ৭৫ ভাগ। ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে অষ্টম মজুরি বোর্ড কার্যকর হয়।

বাংলাদেশের গর্ব গার্মেন্টস খাতে দিন-রাত পরিশ্রম করে শ্রমিকরা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে এলেও রপ্তানি খাতের এই শ্রমিকদের জন্য কোনো বেতন কাঠামো ছিল না। ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই গার্মেন্টস খাতে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে গঠন করা হয় স্থায়ী মজুরি বোর্ড। পরবর্তীতে সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব করে। বিজেএমসিতে কর্মরত ৬১ হাজার ৯৫ জন কর্মচারীর বেতন নিষ্পত্তি করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ৪০০ কোটি টাকা আলাদা বাজেট করা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকার জনবান্ধব সরকার। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি কমিয়ে আনা এবং প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর কর্মরতদের যথোপযুক্ত কাজের মূল্যায়ন করতে সরকারের এমন উদ্যোগসমূহ প্রশংসিত হয়েছে সর্বমহলে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here