• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে গতি

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২  

Find us in facebook

Find us in facebook

মামলা-মোকদ্দমা তো আছেই, ব্যক্তি-জনজীবনের নানা সংকট-সমস্যার সমাধান, প্রতিকারে বরাবরের মতোই দেশের শীর্ষ আদালতকে সচেষ্ট থাকতে হয়েছে বছরজুড়ে। পরিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা, ক্ষতিপূরণ, ন্যায্যতা বা বৈধতা নিয়েও বিভিন্ন রিট মামলায় গুরুত্বপূর্ণ আদেশ-নির্দেশ, পর্যবেক্ষণ, অভিমত এসেছে উচ্চ আদালত থেকে। সেই সঙ্গে জনস্বার্থ, সংবিধান, মানবাধিকার নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশও এসেছে অনেক। অন্যদিকে বিচারকাজের বাইরে কিছু বিষয় আলাচনা, বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে।

সারা বছর ছুটির পর অবসরে আপিল বিভাগের বিচারপতি : বছরের শুরুতেই আলোচনার জন্ম দেয় আপিল বিভাগের এক বিচারপতির ছুটি। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীকে রেখে তাঁর কনিষ্ঠ সহকর্মী বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে গত বছরের (২০২১ সাল) ৩০ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই দিনই ছুটিতে যান বিচারপতি ইমান আলী। এরপর কয়েক দফা ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়। গত ১৮ ডিসেম্বর অবসরে যান তিনি।

মামলা নিষ্পত্তি—বিচারিক আদালতে ১০৫ শতাংশ, উচ্চ আদালতে ৭৯ শতাংশ : বিচার বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে অধস্তন আদালতের মামলাজট কমাতে এবং কাজে গতিশীলতা আনতে হাইকোর্টের বিচারপতিদের প্রধান করে ‘মনিটরিং সেল’ এবং হাইকোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগসংক্রান্ত ‘প্রাথমিক অনুসন্ধান কমিটি’ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি। এতে মামলা নিষ্পত্তিতে গতি বাড়ে। হাইকোর্টেও নিয়মিত বেঞ্চের পাশাপাশি রাখা হয় কয়েকটি বিশেষ বেঞ্চ। গত ৩০ মার্চ অবকাশ ছুটির মধ্যে উচ্চ আদালতে একসঙ্গে এক ডজন ডেথ রেফারেন্স মামলার (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন) নিষ্পত্তি হয়, সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে যা প্রথম।

এ ছাড়া গত ২০ এপ্রিল ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জামিনসংক্রান্ত এক হাজার ৪৯৮টি মামলার রুল নিষ্পত্তি করেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের দ্বৈত বেঞ্চ। এক দিনে রুল নিষ্পত্তির রেকর্ড এটি।

আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অধস্তন আদালতের বিচারকাজ পর্যবেক্ষণে কমিটি গঠনের পর বর্তমানে মামলা দায়েরের চেয়ে নিষ্পত্তির হার বেড়েছে। বছরের প্রথম তিন মাস মামলা নিষ্পত্তির হার ছিল ৮৫ শতাংশ, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৫ শতাংশে। ’

আইনজীবী সমিত নির্বাচনের ফল বিতর্ক : মার্চের দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন বেশ উত্তাপ ছড়ায়। এ নির্বাচন নিয়ে সংসদেও আলোচনা হয়েছে। ১৫-১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ভোটগণনায় কারচুপির অভিযোগে আটকে যায় ফলগণনা। এ অভিযোগের পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান। এভাবে কিছুদিন ঝুলে থাকলেও সমিতির তখনকার কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ (১২ এপ্রিল) শেষ হতে চলায় সমিতিরই সাবেক সহসভাপতি মো. অজি উল্লাহকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নতুন একটি ‘নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি’ ঘোষণা করে আগের কমিটির আওয়ামীপন্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। ২৮ এপ্রিল এ উপকমিটি ভোট পুনর্গণনা করে ফল ঘোষণা করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের আইনজীবীদের হট্টগোল, মারামারি, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই ফল মেনে নেননি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা।

তাহের হত্যা মামলার রায় : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক এস তাহের হত্যায় তাঁরই সহকর্মী মিয়া মো. মহিউদ্দিন ও বাসার তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ১৬ মার্চ রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। আর কোনো বিচারিক ধাপ না থাকায় মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন মিয়া মো. মহিউদ্দিন। সে আবেদন শুনানির জন্য রেখে ৪ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার প্রক্রিয়া স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

পদ নিয়ে জায়েদ-নিপুণের লড়াই : ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের প্রার্থিতা বাতিল ও পদে বসা নিয়ে জায়েদ খান ও নিপুণ আক্তারের আইনি লড়াই ছিল বছরের আলোচিত বিষয়। নির্বাচনী আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করার মধ্য দিয়ে উচ্চ আদালতে এ লড়াই শুরু করেন জায়েদ খান। তাঁর রিটের শুনানির পর নির্বাচনী আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে ২ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট। পরে নিপুণ আক্তারের আবেদনে ৬ মার্চ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে স্থিতাবস্থা দেন চেম্বার আদালত। ২১ নভেম্বর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দেন সর্বোচ্চ আদালত। সেদিন হাইকোর্টের রায় স্থগিত রেখে সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশও (স্ট্যাটাস কো) তুলে নেওয়া হয়। সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেন বসেন নিপুণ।

সেলিম খানের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ের রায় : চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার ২১টি মৌজায় মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খানের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা আসে আপিল বিভাগ থেকে। বালু উত্তোলন সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বাতিল করে ২৯ মে এ রায় দেন বিভাগ। এ ছাড়া ২০ সেপ্টেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সেলিম খানকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন চেম্বার আদালত।

হাজি সেলিমের জামিন : দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের আপিলের রায় হয় ২০২১ সালের ৯ মার্চ। রায়ে হাজি সেলিমের ১০ বছর সাজা বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এ আত্মসমর্পণ করতে বলা হয় হাজি সেলিমকে। গত ২২ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক হাজি সেলিমকে কারাগারে পাঠান। ২৪ মে সাজার বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদনের সঙ্গে জামিনের আবেদন করেন তিনি। ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাঁকে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। আর সে আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত দেওয়া হয় জামিন। এর মধ্যে দণ্ড মাথায় নিয়ে হাজি সেলিম কঠোর গোপনীয়তায় বিদেশে গিয়েছিলেন। তাঁর এই দেশত্যাগ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হয়।

কাউকে এভাবে দায়মুক্তি দেওয়া উচিত নয় : ফৌজদারি অপরাধে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের আগে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করে ২৫ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে এ বিধান বাতিল করা হয়। রায়ে গ্রেপ্তারের আগে অনুমতি নেওয়ার বিধানটিকে ‘মুষ্টিমেয় দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মচারীর দায়মুক্তি’ বলে পর্যবেক্ষণ দেন উচ্চ আদালত। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের রায়টি স্থগিত করেন আপিল বিভাগ।

চেক প্রত্যাখ্যান মামলা সংক্রান্ত রায় : ২৩ নভেম্বর উচ্চ আদালতের দেওয়া এই রায়ে বলা হয়, ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করতে পারবে না কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩-এর বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করা যাবে। কিন্তু ব্র্যাক ব্যাংকের আবেদনে ১ ডিসেম্বর চেক প্রত্যাখ্যান মামলার রায়টিও স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। এর আগে ২৮ আগস্ট এসংক্রান্ত আরেকটি রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলায় ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো সংবিধান পরিপন্থী ও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে সেটিও স্থগিত আছে।

এ ছাড়া ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকার মতো ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত তা চিহ্নিত করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের মামলা প্রত্যাহার, অর্থপাচারের তথ্য চাওয়া নিয়ে সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য নিয়ে হাইকোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তাকসিম এ খানের বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার হিসাব চেয়ে হাইকোর্টের আদেশ, দুর্নীতির মামলায় আগাম জামিন না দিয়ে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক চার ট্রাস্টিকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াসহ সমসাময়িক অনেক বিষয়ে আদেশ-নির্দেশ এসেছে উচ্চ আদালত থেকে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here