• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

শান্তির খোঁজে ভাসানচরে যেতে চায় রোহিঙ্গারা 

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

সাধারণ রোহিঙ্গারা একমুহূর্তও আর কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে থাকতে চাইছে না। সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের অব্যাহত অরাজকতায় তাদের মন বিষিয়ে উঠেছে। পরস্পরবিরোধী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের হানাহানিতে এক সপ্তাহে আটজনের মৃত্যু দেখেছে তারা। এসব কারণে যত দ্রুত সম্ভব তারা দেশে ফিরতে চায়। নতুবা শান্তির খোঁজে ভিড়তে চায় নোয়াখালীর ভাসানচরে।

মিয়ানমার সেনাদের অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে দেশত্যাগী মানুষগুলোকে বাংলাদেশ সরকার এবং এ দেশের জনগণ মানবিক কারণে ঠাঁই দিয়েছিল। আশ্রয় পেয়ে সেই রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকে। তারা বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় নিয়ে আইন অমান্য করে চলেছে  প্রতিনিয়ত। এসব সন্ত্রাসী সাধারণ রোহিঙ্গাদের জন্য যেমন ‘গলার কাঁটা’, তেমনি স্থানীয় লোকজনও রয়েছে নিরাপত্তাহীনতায়।

সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের ভয়ে তটস্থ সাধারণ রোহিঙ্গারাই এখন প্রকাশ্যে বলছে, তারা নিজ দেশ রাখাইনে ফিরতে চায়। দেশে ফেরাতে যদি দেরি হয়, তাহলে তাদের এখনই ভাসানচরে পাঠানোর দাবি জানিয়েছে। এ ব্যাপারে উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের বাসিন্দা মোহাম্মদ হাফেজ বলেন, ‘আঁরা বর্মার মিলিটারির অত্যাচার খাইয়্যেরে ধাই আস্যি। এবার আঁরার কউমর পার্টির অত্যাচারুত্তু বাঁইচত চাই।’ (আমরা মিয়ানমারের সেনাদের অত্যাচারে পালিয়ে এসেছি। এবার আমাদের স্বজাতির সন্ত্রাসীদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে চাই।)

কুতুপালং শিবিরের লম্বাশিয়া এলাকার বাসিন্দা রোহিঙ্গা রহমতুল্লাহ দুঃখের সুরে বলেন, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি শ্রেণি কী কারণে অস্ত্র হাতে নেয়, সেটা তাঁদের বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে খুনখারাবি, অপহরণ, মাদক কারবারে তারা কেন জড়াবে? সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে প্রতি মাসে চাঁদা না দিলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর কেন নেমে আসবে নির্যাতন? কেনই বা এক রোহিঙ্গা আরেক রোহিঙ্গার ঘর-দুয়ারে আগুন দেবে? তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়াসহ ওষুধ-পথ্যেরও কোনো অভাব নেই। দেদার মিলছে কাজকর্ম। অভাব নেই টাকা-পয়সারও। এমন সুখ-শান্তির মধ্যে এ রকম অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি কেন করা হচ্ছে?

কুতুপালং নিবন্ধিত শিবিরের ই-ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘করিম বাহিনী আমার ১২ বছরের সন্তান রবিউলকে অপহরণ করেছিল। টানা ছয় দিন পর আজ (রবিবার) আমার বুকের ধনকে পুলিশ উদ্ধার করেছে।’ তিনি জানান, দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী করিমের দলে এক হাজার ২০০ জন সন্ত্রাসী রয়েছে। করিম বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনে এখানকার সাধারণ রোহিঙ্গারা অতিষ্ঠ। করিমের সন্ত্রাসীরা অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজিসহ মুক্তিপণ বাণিজ্যে জড়িত। গতকাল সকালেও জি-ব্লক এলাকা থেকে সন্ত্রাসীরা এক রোহিঙ্গা নারীকে অপহরণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বলে, আমরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছি। বাংলাদেশের মানবিক সরকার আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। এখন অমানবিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে আবার পালাতে হচ্ছে। তারা বলে, সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভাসানচরসহ অন্য যেকোনো স্থানে যেতে আমরা রাজি।

কক্সবাজারে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা জানান, রোহিঙ্গারা এমনতিইে ভাসানচরে যেতে প্রস্তুত। তবে কিছু সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদের বাধা দিয়ে আসছে। সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের বাধার কারণেই এত দিন সাধারণ রোহিঙ্গারা মুখ খুলছিল না।

এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সব পুলিশ সদস্যকে নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন। ডিআইজি জানান, রোহিঙ্গা শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে গত শুক্রবার থেকে র‌্যাব-পুলিশ, আর্মড ব্যাটালিয়ন ও আনসার বাহিনী যৌথ অভিযান শুরু করেছে। এ পর্যন্ত অস্ত্রশস্ত্রসহ কমপক্ষে ৩০ সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Place your advertisement here
Place your advertisement here