• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

Find us in facebook

বিপন্ন কর্মহীন মানুষের পাশে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন 

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ মে ২০২০  

Find us in facebook

Find us in facebook

করোনার বিরূপ প্রভাবে ওরা কর্মহীন দীর্ঘদিন ধরে। ঘরে খাবার নেই। চক্ষুলজ্জায় হাতও পাততে পারেন না কারও কাছে। সন্তানসহ পরিবারের সবাইকে থাকতে হয় অভুক্ত, অর্ধভুক্ত। শহরের ফুটপাথ ও বস্তির এমন ভাসমান, অসহায় ন্নি আয়ের ২০ হাজার মানুষ রাজধানীতে প্রতিদিন সেহরি ও ইফতারে পাচ্ছেন রান্না করা খাবার। শুধু ঢাকা বা চট্টগ্রাম নয়, ভোলার দুর্গম চর, কুড়িগ্রামের অজ পাড়াগাঁ, সিলেটের বঞ্চিত চা শ্রমিকদের ঘরে, এমনকি পাহাড়ের গহিনে লাখো নিরন্ন মানুষের কাছে বেঁচে থাকার মতো খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে প্রতিদিন। করোনাকালীন দুর্যোগে বিপন্ন মানুষের পাশে এমন আলোর দিশারি হয়ে উঠেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।

শুধু খাবার বিতরণেই থেমে নেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক ছিটানো, গ্রামের ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত কৃষকদের কাছ থেকে সবজি ও ফলমূল কিনে শহরের অসহায় মানুষদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ, করোনা মহামারিতে কর্মহীন মানুষকে স্বাবলম্বী করাসহ নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বিদ্যানন্দ।

বিদ্যানন্দের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালের দিকে নারায়ণগঞ্জের রেলস্টেশন থেকে। তাদের প্রথম কর্মসূচি ছিল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা দেওয়া। এরপর ধীরে ধীরে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ কক্সবাজার, রাজবাড়ী, রাজশাহী ও রংপুরে কার্যক্রম বিস্তৃত হয় এ সংগঠনের। বিশেষত এক টাকায় আহারের কার্যক্রমের মাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসে এ সংগঠন। স্কুলের নিঃস্ব শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শহরের পথঘাট ও রেলস্টেশনের পথশিশু এবং সুবিধাবঞ্চিত বৃদ্ধ মানুষদের মুখে এক বেলা খাবার তুলে দেওয়ার এই কর্মসূচির শুরু ২০১৬ সালের দিকে। এরপর বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত হয় বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকরা। এক টাকায় চিকিৎসা নামে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসকদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাও দিচ্ছে সংগঠনটি। নিজস্ব গার্মেন্ট 'বাসন্তী'তে স্যানিটারি প্যাড বানিয়ে বিভিন্ন রেলস্টেশন ও বস্তিতে মাত্র ৫ টাকায় বিক্রি করছে বিদ্যানন্দ। এতিমখানার জন্য টি-শার্ট, স্কুলের পোশাক ও চটের ব্যাগসহ নিজেদের প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি হয় এ গার্মেন্টে। বিদ্যানন্দের এতিমখানা ও স্কুলগুলোতে বিনামূল্যে শিক্ষা নিচ্ছে শত শত শিক্ষার্থী।

প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্যোক্তা কিশোর কুমার দাশ একজন সমাজকর্মী। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তিগত অনুদান, বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার সহায়তায় বিদ্যানন্দ তাদের মানবিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। করোনার ভয়াল ছোবল বাংলাদেশে দেখা দেওয়ার পর থেকেই নিজেদের সর্বস্ব নিয়ে মানুষের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

২০ হাজার মানুষের খাবার : রমজানের শুরু থেকে প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষের জন্য ইফতার ও সেহরির সময় রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছে বিদ্যানন্দ। রাজধানীর শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনি ও ওয়ারীর টিপু সুলতানের খান হোটেলে এ রান্না করা হচ্ছে। এ খাবার বিতরণ করা হচ্ছে মোহাম্মদপুর ও কামরাঙ্গীর চরসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মানুষের মধ্যে। শাহজাহানপুরে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে ১২ হাজার মানুষের খাবার। এ জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন হচ্ছে এক টন চাল, ৩০০ কেজি ডাল, ১০০ কেজি আলু, ২০০ কেজি মিষ্টি কুমড়া ও ১২ হাজার ডিমের। রান্নার কাজে যারা সহযোগিতা করছেন, তারাও যুক্ত হয়েছেন নামমাত্র পারিশ্রমিকে। বিদ্যানন্দের ঢাকা বিভাগের পরিচালক সালমান খান ইয়াসীন জানান, সহযোগিতা করা হয় প্রাপ্ত সহায়তা অনুসারে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় খাবার বিতরণের কাজ করা হয়।

অসহায়-বঞ্চিত পরিবারের পাশে : ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজার বিপন্ন পরিবারে শিশুখাদ্যসহ ১০ দিনের খাবার বিতরণ করছে বিদ্যানন্দ। পাশাপাশি বৃদ্ধাশ্রম এবং অনাথ আশ্রমেও খাবার পৌঁছে দিচ্ছে সংগঠনটি। ইতোমধ্যে প্রায় এক লাখ পরিবারের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সালমান খান। তাদের লক্ষ্য প্রায় তিন লাখ পরিবারের কাছে সহায়তা পৌঁছানো। বিদ্যানন্দকে বিতরণের কাজে সহযোগিতা করছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি ও কোস্টগার্ড। করোনা পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে ১০ কোটি টাকার ওপরে অর্থসহায়তা মিলেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান শিশুখাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এ পর্যন্ত চাল, বিস্কুট, ছোলা, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন সামগ্রী কেনা হয়েছে। সালমান খান জানান, প্রথম দিকের চেয়ে এখন অনুদান পাওয়ার পরিমাণ কমেছে। তাই তাদের কার্যক্রম খানিকটা কমিয়ে আনা হয়েছে।

রাস্তার পাশে বিনামূল্যে সবজি : লকডাউনের কারণে কৃষকরা ফসল পানির দরেও বিক্রি করতে পারছেন না। বিদ্যানন্দ এমন কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সবজি কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের বস্তিতে বিতরণ করছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহায়তা সামগ্রী নিয়ে বিদ্যানন্দের যেসব গাড়ি যায় সেগুলো ফেরার সময় ওই এলাকার কৃষকের কাছ থেকে সবজি কিনে শহরে নিয়ে আসে।

করোনা সংক্রমণ শুরুর পর বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবীরা ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক ছিটানো ছাড়াও মাস্ক-পিপিই তৈরি ও বিতরণ শুরু করে। সালমান খান জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতিদিন প্রায় ৯ হাজার লিটার জীবাণুনাশক ছিটানো হয়। বিভিন্ন এলাকায় লকডাউনে আটকে পড়া পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে বিদ্যানন্দ। শুধু মানুষ নয়, বিদ্যানন্দ দাঁড়িয়েছে রাস্তার কুকুর-বিড়ালসহ বিভিন্ন অভুক্ত প্রাণীর পাশেও।

করোনা মহামারির ছোবলে বেকার হয়ে পড়া হাজার হাজার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে বিদ্যানন্দ। কৃষকের বীজতলা, প্রান্তিক ব্যবসায়ীর মূলধন কিংবা গ্রামীণ কুটির শিল্পীর কাঁচামাল কিনে দিতে জাকাত ফান্ড ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। এজন্য দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। এ বিষয়ে সালমান বলেন, এ মুহূর্তে ব্যবসার মূলধন ভেঙে খাচ্ছেন অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। করোনা-পরবর্তী সময়ে এদের চড়া সুদে ঋণ নিতে হবে, নয়তো ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে- এমন কয়েকশ' মানুষকে তারা এবার জাকাত ফান্ড থেকে ব্যবসার কাঁচামাল কিনে দেবেন।

Place your advertisement here
Place your advertisement here