• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook
সর্বশেষ:
বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে ক্রমবর্ধমান জলরাশি: গবেষণা উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে চার লেন চালু, ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির সব উন্নয়ন সহযোগীদের এক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী বিডিএস ভূমি ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে: ভূমিমন্ত্রী বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা দিতে হবে: ওবায়দুল কাদের

জীবন যেভাবে পাপমুক্ত হয়

– দৈনিক রংপুর নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

Find us in facebook

Find us in facebook

মানুষ প্রতিদিন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় বহু গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়। এর মধ্যে কিছু কবিরা গুনাহ, আবার কিছু সগিরা গুনাহ। কবিরা গুনাহ আবার দুই ধরনের, কিছু গুনাহ আল্লাহর হক বিনষ্ট করার কারণে হয়, আর কিছু হয় বান্দার হক নষ্ট করার কারণে। নিম্নে সব ধরনের গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের উপায় তুলে ধরা হলো—

তাওবা

আল্লাহর হক বিনষ্ট করার কারণে যে গুনাহ হয়, বিশুদ্ধ অন্তরে তাওবা করলে মহান আল্লাহ সেই গুনাহগুলো মাফ করে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীরা, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো—বিশুদ্ধ তাওবা। সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কর্ম মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৮)

আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘গুনাহ থেকে তাওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তিতুল্য।’  (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৫০)

কারো হক নষ্ট করলে তার সঙ্গে সুরাহা করে নেওয়া

যেসব গুনাহ বান্দার হকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, বান্দার সঙ্গে সেই বিষয়ে সুরাহা না করা পর্যন্ত মহান আল্লাহ সে পাপ ক্ষমা করবেন না। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ঋণ ছাড়া শহীদের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (মুসলমি, হাদিস : ৪৭৭৭)

ইমাম নববী (রহ.) বলেন, উল্লিখিত হাদিসে ‘ঋণ ছাড়া সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে’ বলার দ্বারা উম্মতকে সতর্ক করা হয়েছে । মহান আল্লাহ বান্দার হক মাফ করবেন না। জিহাদ, শাহাদাত ও অন্য নেক আমলের দ্বারা আল্লাহর হক মাফ হয়ে যায়। কিন্তু বান্দার হক তার কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া মাফ হয় না। (শরহু সহিহিল মুসলিম : ৫/২৮)

এ কারণে যারা বান্দার হক মাথায় নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে, রাসুল (সা.) তাদের দেউলিয়া ঘোষণা দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের প্রশ্ন করেন, তোমরা কি জানো, দেউলিয়া কে? তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমাদের মধ্যে দেউলিয়া হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার দিরহামও (নগদ অর্থ) নেই, কোনো সম্পদও নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে দেউলিয়া, যে কিয়ামত দিন নামাজ, রোজা, জাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সঙ্গে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধর করেছে, ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল থেকে এই ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে, অন্য ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ বদলা (বিনিময়) নেওয়ার আগেই তার সৎ আমল নিঃশেষ হয়ে যাবে। অতঃপর তাদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৮)

বান্দার হক থেকে দায়মুক্ত হওয়ার পদ্ধতি দুটি হতে পারে। এক. যে হক নষ্ট করা হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া। দুই. যার হক নষ্ট করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া।

উল্লিখিত আমলগুলোর মাধ্যমে কবিরা গুনাহ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। কিছু আমল এমন আছে, যেগুলোর মাধ্যমে মানুষের সগিরা গুনাহ মাফ হয়ে যায়। নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো—

নামাজ-রোজায় যত্নবান হওয়া

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান, তার মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা হয়ে যাবে, যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৪০)

রমজানের রাতের ইবাদত

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৭)

শবে কদরের ইবাদত

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পেছনের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা পালন করবে, তারও অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০১)

উত্তমরূপে অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়া

হুমরান (রহ.) বলেন, আমি উসমান (রা.)-কে অজু করতে দেখেছি। ...এরপর বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে অজু করতে দেখেছি আমার এ অজুর মতোই। এরপর তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ অজুর মতো অজু করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং এতে মনে মনে কোনো কিছুর চিন্তা-ভাবনায় লিপ্ত হবে না, তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখারি, হাদিস : ১৯৩৪)

‘রব্বানা লাকাল হামদ’ বলা

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ইমাম যখন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলেন, তখন তোমরা ‘আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। কেননা যার এ উক্তি ফেরেশতাদের উক্তির সঙ্গে একই সময়ে উচ্চারিত হয়, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ৭৯৬)

খাওয়ার পর দোয়া পড়া

সাহল ইবনে মুআজ ইবনে আনাস (রা.) তাঁর পিতা সূত্রে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আহার করার পর বলল, ‘সব প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি আমাকে এটা আহার করিয়েছেন এবং এটা আমাকে রিজিক দিয়েছেন, আমার তা লাভ করার প্রচেষ্টা বা শক্তি ছাড়া’, তার আগের সব অপরাধ ক্ষমা করা হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৫৮)

হজ করা

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করল এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল।’ (বুখারি, হাদিস : ১৫২১)

Place your advertisement here
Place your advertisement here