• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

Find us in facebook

কালো টাকায় মনোনয়ন বাণিজ্য

দৈনিক রংপুর

প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮  

Find us in facebook

Find us in facebook

ভালো কিছু হবে এই প্রত্যাশাতে মানুষ ভোট দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য সরকার নির্বাচন করে। সেই কারণেই ভোটের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরা ভালো ভালো প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হন জনতার সামনে। তাদের অনেকে দীর্ঘ সময় দলের জন্য নিজেদের নিবেদিত করেন, ত্যাগ স্বীকার করেন। কিন্তু নিবেদিত এবং ত্যাগী নেতা কর্মী হলেই দল তাকে মূল্যায়ন করবে এমন গ্যারান্টি নেই। ত্যাগের মূল্যায়ন একেবারে হয় না তা নয়, তবে একটা বড় বিবেচ্য বিষয় থাকে অর্থ।

 ‘প্রভাবশালী নেতা, এবং তাদের ঘনিষ্ঠরা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন। দলের সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিরাও পেয়েছেন মনোনয়ন। আবার এমন অনেকে পেয়েছেন যাদের রাজনীতিতে নামই কখনো শোনেনি কেউ।’ 

জাতীয় পার্টি এবং বিএনপি’র শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এবার বড় মাত্রায় মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন এমন একটা অভিযোগ উঠেছে খোদ দলের বিভিন্ন স্তর থেকেই। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ দলের মহাসচিব রুহুল আমি হাওলাদারকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে চেষ্টা করেছেন।

বিএনপির পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত। বিএনপির পল্টন এবং গুলশান কার্যালয়ে লাগাতার বিক্ষোভ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে টাকা খাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে নাম ধরে ধরে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরাসরি এমন অভিযোগ না পাওয়া গেলেও স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক কোন্দল আভাস দেয় যে, অর্থ অনেক ক্ষেত্রেই বড় ভূমিকা রেখেছে।

নির্বাচনে এইসব নেতারা (তাদের সাথে আবার জুটেছে নাগরিক রাজনীতিকরা) নানা গালভরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। মানুষের সামনে উড়িয়ে দিচ্ছেন স্বপ্নের ফানুস। দুর্নীতিমুক্ত দেশ, স্বচ্ছ প্রশাসন, কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ— এমনসব কত কথাই না বলছেন জোট নেতারা। কিন্তু তারা যাদের সাথে ঐক্য করলেন তাদের সাথে যেমন আছে স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী দলের নেতা ও পরিবারের সদস্যরা, আছেন জঙ্গিবাদের মদদদাতা হিসেবে পরিচিত রাজনীতিকরা এবং এবার দল থেকে উচ্চারিত মনোনয়ন বাণিজ্যিকরা।

কে না চায় দেশ দুর্নীতিমুক্ত হোক, আমাদের দুঃখ ঘুচুক। মানুষের সেই মনের কথাটি নির্বাচনের সময় যেন ম্যাজিকের মতো কাজ করে। কিন্তু এবার কি তা হবে? মানুষ দেখছে কিভাবে দলের ভেতরই দুর্নীতিকে লালন করা হল। নির্বাচন অত্যাসন্ন আর সেই হিসেব-নিকেশ করা শুরু করেছে মানুষ এখন।

এমন যদি অবস্থা হয় তাহলে মানুষের প্রত্যাশাপূরণে আদৌ কি সফল হবে এমন দল বা জোট? নাকি এগুলো সবই ফাঁকা আওয়াজ? এমনিতে আমাদের দলগুলো যত প্রতিশ্রুতি দেয় তার বেশিরভাগ বাস্তবায়ন করতে পারেনা। তবে শেখ হাসিনার দশটি বছর উন্নয়ন দশক হিসেবে আজীবন বিবেচিত হয়ে আসবে এদেশের রাজনীতিতে।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাত ধরে দেশ যে অর্থনৈতিক সক্ষমতার পথে চলেছে তার স্বীকৃতি এসেছে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে আবারও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসবে বলে আভাস দিয়েছে লন্ডনভিত্তিক জরিপ সংস্থা দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট-এর একটি বিশেষ সংস্থা ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। বিগত ৬০ বছর ধরে তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জরিপ করে আসছে। ৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে তারা জানায়, বর্তমান সরকারের সময় টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখেছে বাংলাদেশ। আর এ কারণেই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসার সম্ভাবনা বেশি।

তারা আরও জানায়, ২০১৮-১৯ সাল থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৭.৭ শতাংশে। প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। বলা হয়, তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতাই আগামী নির্বাচনে মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। বিভিন্ন জরিপের বরাত দিয়ে তারা জানায়, এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনাই সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী।

আমরা জানি, ভোটের সময় কালো টাকার জোগান বাড়ে। এবার শক্তিশালী বিরোধী দলের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভে কারণে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি কিছুটা মান্যতাও পেল। বোঝাই যাচ্ছে বাজারে রয়েছে বহু কালো টাকা। নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন কী বলবে? কমিশন কী পারবে জোর গলায় বলতে যে, বাজারে কালো টাকা থাকবে না?

দুর্নীতি দমন কমিশন -দুদক বলেছে তার সদিচ্ছার কথা। নির্বাচনে কালো টাকা ব্যবহারের ঘটনা নতুন কিছু নয়, তবে কালো টাকা রুখতে যে কোন পদক্ষেপ কখনো নেয়া হয় না, বরং কালো টাকার মালিককে যে দল মূল্যায়ন করে সেটাই প্রমাণ হয় দলীয় মনোনয়ন বাণিজ্যে।

দেশে নির্বাচন এলেই টাকা ও ক্ষমতার দাপট বেড়ে যায়। বিশেষ করে প্রার্থীরা ভোট পেতে ভোটারদের নানা রকম প্রতিশ্রুতি ও বৈষয়িক লাভের প্রলোভন দেখান। এতে করে আমাদের মত দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির রাজনৈতিক প্রার্থী হওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে।

প্রতি নির্বাচনে এই কালো টাকার দৌরাত্ম্য নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত করে। তবু দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা যেহেতেু এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সেহেতু দেশের প্রচলিত আইন কানুন যেন এই ক্ষেত্রে অসহায় দর্শকের ভূমিকা পালন করে।

প্রভাবশালী নেতা, এবং তাদের ঘনিষ্ঠরা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন। দলের সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিরাও পেয়েছেন মনোনয়ন। আবার এমন অনেকে পেয়েছেন যাদের রাজনীতিতে নামই কখনো শোনেনি কেউ।

এমন পরিস্থিতিতে দলের ত্যাগী ও নিবেদিত অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী না হলেও নির্বাচনী যুদ্ধ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। এতে ভোটের লড়াইয়ে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে যতটা, সার্বিক রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার চেয়ে বেশি।

Place your advertisement here
Place your advertisement here